বিপ্লব কান্তি দাশ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
স্বাধীনতা সংগ্রামী মহিম চন্দ্র দাশ ১৮৯৭ সালে তিনি বি.এল পাস করে।চট্টগ্রাম জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এ সময়ে তিনি কংগ্রেস দলের সদস্য ভুক্ত হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ হলে সারা বাংলায় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে উঠে। মহিম দাশ এ আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন এবং নেতৃত্ব দেন। চট্টগ্রাম কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে তিনি সম্পৃক্ত হন এবং দীর্ঘকাল সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি ওকালতি পেশা ছেড়ে পুনরায় শিক্ষাকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি পর্যায়ক্রমে কাজেম আলী স্কুল ও ন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯০৬ সালে ১৫ ও ১৬ এপ্রিল বরিশালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ১৯০৭ এর এপ্রিল মাসে বঙ্গীয় বহরমপুর অধিবেশনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য চিটাগাং এসোসিয়েশন কর্তৃক মনোনীত হন। ১৯০৯ এর দিকে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য ভুক্ত হন।
জন্ম
তার জন্মঃ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭১ এবং ৩ এপ্রিল ১৯৪০ সালে মৃত্যু বরণ করেন। চট্টগ্রামের পটিয়ার ভাটিখাইনের কচুয়াই গ্রামে মহিমচন্দ্র দাশ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা যাত্রামোহন দাশ। গ্রামের পাঠশালায় তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু। বাল্যকাল হতে স্বদেশপ্রেমী ও অনন্য প্রতিভার অধিকারী মহিমদাশ ১৮৯০ সালে পটিয়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় হতে রায় বাহাদুর বৃত্তি সহ এন্ট্রাস পাস করেন। কৃতী শিক্ষার্থী মহিম দাশ এন্ট্রাস পাস করে উচ্চ শিক্ষা লাভের ইচ্ছা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন এবং চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। চট্টগ্রাম কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে ১৮৯২ সালে এ এফ এ পাস করেন এবং কলেজে সংশ্লিষ্ট বছরের শ্রেষ্ঠ ছাত্র নির্বাচিত হয়ে রোপ্য পদক পান।
চট্টগ্রাম কলেজ হতে এফ এ পাসের পর তিনি কলিকাতা চলে যান এবং সেখানে কলিকাতা সিটি কলেজে বি.এ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৮৯৪ সালে কলিকাতা সিটি কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে বি.এ পাস করেন। বি.এ পাসের পর তিনি চট্টগ্রাম চলে আসেন এবং চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। কিছু দিন পর তিনি বোয়ালখালী জিলা স্কুলে বদলি হয়ে যান।
মহিম চন্দ্র দাশ স্বদেশী আন্দোলনের সাথে সক্রিয় থাকলেও তিনি সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। ১৯১১ এ বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ার পর পরই জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিনি ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। আজীবন তিনি এ সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে কাজ করেছেন। তিনি একাধিকবার এ সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১৯ এ জননেতা যাত্রামোহন সেনের মৃত্যুর পর তদ্বীয় পুত্র যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ কমিটিতে মহিম চন্দ্র দাশ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯২০ ও ১৯২১ তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সে সময়ে গান্ধিজীর আহ্বানে তিনি আইন ব্যবসা ত্যাগ করেন। ১৯২১ এর অক্টোবর মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯২১ এর জুলাই মাসে মহিমদাসের প্রিয় বন্ধু কালিশঙ্কর চক্রবর্তীর সাপ্তাহিক জ্যোতি দৈনিকে রূপান্তরিত হলে তিনি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯২৯ পর্যন্ত তিনি পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। কলিকাতার বাইরে সর্বপ্রথম এ পত্রিকাটি দৈনিক হিসেবে চট্টগ্রাম হতে ১৯২১ এর ৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয় যা ১৯২৯ এ ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।
১৯২২ এ যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত প্রাদেশিক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নেন। জেলার পদ খালি হয়ে যায় মহিম দাশ তাঁর স্থলে জেলা কংগ্রেসের অস্থায়ী সভাপতির দায়িত্ব নেন। ১৯২২ এ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সম্মেলনের অধিবেশনে অভ্যর্থনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দেশবন্ধু পত্নি বাসন্তি দেবী। ১৯২৩ তিনি দিল্লি কংগ্রেসে যোগদানের জন্য চট্টগ্রাম হতে প্রেরিত প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩০ এর ১৬ এপ্রিল কুমিরা সমুদ্রতীরে লবণ আইন ভঙ্গকারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৩৩ এ দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনের মৃত্যুর পর তিনি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং আজীবন এ পদে অধিষ্ঠিত থেকে দায়িত্বশীলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩৮ এর জুন মাসে কংগ্রেস সভাপতি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু চট্টগ্রাম সফরে আসলে মহিম চন্দ্র দাশ তাঁর সাথে বিভিন্ন জনসভায় যোগ দেন। ১৯৩৮ এর ১১ সেপ্টেম্বর যাত্রামোহন সেন হলে, ‘সমাজতন্ত্রী দলের নেতা সূরেশ চন্দ্র ব্যানার্জি এবং সহযোগিদের সংবর্ধনা সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩৮ এর ২৫ ডিসেম্বর নিখিল বঙ্গ প্রবর্তক সংঘ সম্মেলনে তিনি এর কায্যপ্রণালীর উপর দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন এবং এ বিষয়ে কাজ করেন।
১৯৩৯ এর ৩ ফেব্রুয়ারি জেএমসেন হলে চট্টগ্রাম সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগ কবি নবীন চন্দ্র সেনের স্মৃতি বাষির্কী উদযাপনের উদ্যোগ নেন। মহীম চন্দ্র দাশ একজন সৎ, নিষ্ঠাবান রাজনীতিজ্ঞ ও সাংবাদিক হিসেবে আজীবন কাজ করেছেন। তিনি দীর্ঘ সময় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সদস্য ছিলেন। তাঁর রচিত ‘প্রত্ন তত্বের আভাস’ শীর্ষক প্রবন্ধটি চট্টগ্রাম সাহিত্য পরিষদের ১৯১৩ এর বার্ষিক অধিবেশনে পাঠ করা হয়। “কৈকয়ীর কলঙ্ক” নামক তাঁর রচিত রম্য রচনা, “সাধনা পত্রিকার” ১৩১৬ বাংলায় বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে ‘জাতের বজ্জাতি’ সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। মহিম চন্দ্র দাশ শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সুলেখক হিসেবে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পুরো বাংলায় এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছেন। মহান সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ্ মহিম চন্দ্র দাশ ১৯৪০ এ বঙ্গীয় আইন পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য কলিকাতায় যান। পরিষদের বৈঠকে যোগ দেয়ার পূর্বে বন সম্পর্কিত ছাটাই প্রস্তাব নিয়ে যে আলোচনা হয় তাতে তিনি চট্টগ্রামে সম্পদ ও পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দীর্ঘ আলোচনা করেন। আলোচনার পর পরই তিনি আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪০ এর ৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মরদেহ চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয় এবং চট্টগ্রামের জেএমসেন হল প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধেয় যতীন্দ্র মোহন সেনের চিতা ভস্মের প্রোথিত স্থানের পার্শ্বে তাঁকে দাহ করা হয়।
Leave a Reply